ভূমিকাঃ সাহাবায়ে কেরামের পরবর্তী যুগেই হলো তাবেঈগণের যুগ। তাঁরা সাহাবিদের কাছ থেকে পবিত্র কুরআন- হাদিসের দীক্ষা গ্রহণ করে এবং তাঁদের ধারা অব্যাহত রেখে তাফসির চর্চা করতে থাকে। তাঁরা তাঁদের তাফসির চর্চায় পবিত্র কুরআন, হাদিস ও সাহাবিদের বক্তব্যের আশ্রয় গ্রহণ করে।
তাবেঈদের তাফসির বিল মাসূরের নির্ভরযোগ্যতা: তাবেঈগণের তাফসির গ্রহণ করার ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো-
১. একদল আলেমের অভিমত: ইবনে আকীলসহ একদল আলেমের মতে, তাবেঈদের তাফসির গ্রহণ করা যাবে না। তাদের দলিল: তাদের দলিল হলো, তাবেঈগণ সরাসরি নবি (সা.)-এর নিকট থেকে কিছু শুনেননি এবং কোন পরিস্থিতিতে কুরআন নাজিল হয়েছে, তাও তারা দেখেন নি। ফলে তাঁদের তাফসিরের ভুল থাকাটা স্বাভাবিক। এজন্য তাবেঈগণের বক্তব্য গ্রহণ করা ওয়াজিব নয়।
২. অধিকাংশ মুফাসসিরের অভিমত: অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে, তাবেঈগণের তাফসির গ্রহণযোগ্য। কেননা, তাঁরা অধিকাংশ তাফসিরই সাহাবিদের কাছ থেকে গ্রহণ করেছেন। তাদের দলিল: তাঁরা দলিল হিসেবে কতিপয় তাবেঈর বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। যথা- (ক) মুজাহিদ (রহ.) বলেছেন- "আমি আমার মাসহাফকে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর নিকট তিনবার পেশ করলাম। সূরা ফাতিহা থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি আয়াত সম্পর্কে তাঁকে প্রশ্ন করেছি।" (খ) কাতাদাহ (রহ.) বলেন, 'কুরআনে এমন কোনো আয়াত নেই, যার সম্পর্কে আমি কিছু না কিছু শ্রবণ করিনি।' সুতরাং তাদের মতামত গ্রহণ করা যাবে। কারণ ওহি ও মহানবি (সা.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইসলামি সমাজব্যবস্থার যুগ থেকে সময়ের ব্যবধানের দিক দিয়ে তাবেঈদের যুগ তাদের পরবর্তীদের ভুলনায় অনেক নিকটবর্তী।
৩. সাইয়্যিদ মুহাম্মদ সাফতী (রা.)-এর অভিমত: শায়খ সাইয়্যিদ মুহাম্মদ সাফতী (রহ.) বলেছেন, জমহুর ওলামায়ে কেরামের মতে, তাবেঈদের তাফসির গ্রহণীয়। কারণ তাঁরা সাহাবিদের শিষ্য এবং তাঁদের কাছ থেকে তাফসির শিক্ষা করেছেন। সুতরাং তাবেঈদের তাফসির যদি ইজমার ভিত্তিতে হয়ে থাকে, তবে সেটা গ্রহণ করা উত্তম। আর যদি কিতাবের ওপর নির্ভর করে তাফসির করে থাকেন, তবে তা গ্রহণযোগ্য নয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, তারা যদি সাহাবিদের থেকে গ্রহণ করে থাকে এবং তাবেঈদের ইজমার ভিত্তিতে কোনো কিছু বলে, তবে তা গ্রহণযোগ্য। আর যদি শুধু আহলে কিতাবের ওপর নির্ভর করে তাফসির করে, তবে তা গ্রহণযোগ্য নয়।