28 views
in সুফিবাদ by (109 points)
শাহ সুফি হযরত আবু বকর সিদ্দিকী (রহ.) এর সমাজ সংস্কার ও ইসলাম প্রচার সম্পর্কে কংক্ষেপে লিখ?

1 Answer

0 votes
by (494 points)

ভূমিকা: ভারত ও বাংলাদেশে যারা সুফি সাধনায় শ্রেষ্ঠ ছিলেন তাদের মধ্যে হযরত আবু বকর সিদ্দিকী (রহ.) অন্যতম ছিলেন। তিনি একাধারে ইসলাম প্রচারক, শিক্ষানুরাগী, সমাজসংস্কার, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকতার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তার কর্মজীবন বিশাল ও বৈচিত্র্যময় ছিল। তিনি ধর্মীয় নন, সামাজিক সংস্কারের সাথে সাথে ইসলাম প্রচার কার্যক্রমেও নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। সুতরাং সমাজসংস্কার ও ইসলাম প্রচারে তার অবদান অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। ইলমে জাহির ও ইলমে বাতিন এ পরিপূর্ণ পাণ্ডিত্য লাভের পর তিনি সক্রিয়ভাবে ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুপ্রবেশকৃত কুসংস্কার, অপসংস্কার, শিরক বিদআত এবং কুপ্রথার বিরুদ্ধে এক প্রবল আন্দোলনের সূচনা করেন। তাঁর ন্য আন্দোলনের ফলে ঐসব জঞ্জাল একে একে সমাজের বুক থেকে যা দূরীভূত হতে থাকে। ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে তিনি মানুষকে । অপূর্ণ কর্মপ্রেরণায় উজ্জীবিত করেন। ফলে ব্যক্তি পূজা, পীরপূজা, ত দরগাহপূজাসহ যাবতীয় শিরকও বিদআতের শির উৎপাটিত হয়।

নিম্নে সমাজসংস্কার ও ইসলাম প্রচারে পির মওলানা আবু বকর সিদ্দিকী (রহ.) এর অবদান আলোচনা করা হলো : - মওলানা আবু বকর সিদ্দিকী (রহ.) বিভিন্ন উপায়ে ও মাধ্যমে সমাজসংস্কার ও ইসলামের প্রচার ও প্রসার করেছিলেন। যেমন-

১. ওয়াজ নসিহত: মওলানা আবু বকর সিদ্দিকী (রহ.) ওয়াজ ■ নসিহত, তালিম-তালকীন ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষকে সঠিক রাস্তা দেখানোর কাজে এক বিপ্লবী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। সমাজের অনাচার, অত্যাচার, শিরক বিদআতের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হয়ে উঠেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি সারা বাংলা ও আসামে ওয়াজ নসিহতের মাহফিল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেছেন, "আমার বাড়িতে প্রতি বছর, ২১, ২২, ২৩ ফাল্গুন ইসালে সওয়াব মাহফিল করি। আমি জানি, আল্লাহ পাক বলেছেন, “হে ইমানদারগণ, তোমরা নিজেকে ও নিজেদের পরিজনকে অগ্নি হতে রক্ষা কর। এ আয়াতের মর্মার্থ বুঝেই তিনি এসকল মাহফিলের আয়োজন করতেন। 

২. সফরের মাধ্যমে: তিনি সারা ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপকভাবে সফর করে সত্যিকার ইসলামের পথে মুসলমানদের বা ফিরে আসার জন্য আহ্বান জানান। আজমীর শরিফ গিয়ে খাজা দি মঈনউদ্দীন চিশতি (রহ.) এর মাজারে ফুল, শিরনী চড়ানো, বি সিজদা দেওয়া, বুসা করা, গান বাদ্য ও কাওয়ালী ইত্যাদি মি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে জোরালো ভাষায় বক্তব্য রাখেন। এক ও পর্যায়ে সৌদি বাদশাহ আব্দুল আজিজ ইবনে সউদের নিকট এক স পত্রে লিখেন, "আপনার রাজ্যের অধিকাংশ অধিবাসী রাসুলে প্র কারীম (সা.) এর সুন্নাতের খিলাফ করে দাড়ি মুণ্ডন করছে এবং জ দাড়ি ছেটে ফেলছে। অন্যান্য স্থান ও দেশের জনগণ তাদের জ দেখাদেখি এসব কুকার্যে ধীরে ধীরে লিপ্ত হয়ে পড়েছে।" তাই এসবের বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব জরুরি।

৩. পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে: ইসলাম প্রচার ও কুসংস্কার দূরীকরণে তাঁর সক্রিয় উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত হয় বাংলা ও ভাষায় বেশ কিছু পত্র-পত্রিকা, যা কি না আগে কেউ করেননি। সে যেসব পত্রিকার মধ্যে অন্যতম মিহির, সুধাকর, ইসলাম প্রচারক, ই নবনূর, মোসলেম হিতৈষী, ইসলাম দর্শন, হানাফী, সুলতান, শরিয়ত উ আল-ইসলাম, শরিয়তে ইসলামি ইত্যাদি। এসব পত্রপত্রিকায় তিনি বিভিন্ন সংস্কার মাসলা-মাসায়েল, তাফসির নিয়মিত প্রচার স করেছিলেন। আজও সে সিলসিলা বিরাজমান রয়েছে।

৪. সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে: তখনও মুসলমানরা বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চার তেমন একটা মনোযোগী ছিলেন না। তিনি বাংলা - ভাষায় সাহিত্য চর্চার গুরুত্ব উপলব্ধি করে এ ভাষায় সাহিত্য চর্চার এগিয়ে আসার জন্য মুসলমানদের উদ্বুদ্ধ করেন। ফলে তাঁকে কেন্দ্র করে এমন একটি সাহিত্যমণ্ডল গড়ে উঠে যা ঊনবিংশ শতাব্দীর ৮০ দশক থেকে বিংশ শতাব্দীর ৩০ দশকের শেষ নাগাদ পর্যন্ত মুসলিম বাংলার সাহিত্য অঙ্গনের বিকাশের নিয়ামক শক্তিরূপে মূলত কাজ করে। তাঁর আদেশ ও নির্দেশে লিখিত হয় সহস্রাধিক গ্রন্থ। সে গ্রন্থরাজির মধ্যে কুরআন, হাদিস, ফিকহ, তাফসির, ইতিহাস, ঐতিহ্য, উত্তরাধিকার ইত্যাদি জরুরি বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। (সূত্র-আমাদের সূফীয়ায়ে কিরাম, পৃ-৪৪৫)

৫. শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে: শিক্ষা বিস্তারে তিনি যে অবদান রেখে গেছেন তা অতুলনীয়। তাঁর প্রচেষ্টায় এদেশে ৮শ মাদ্রাসা, ১১শ মসজিদ স্থাপিত হয়। মুসলমানরা সত্যিকার শিক্ষায় শিক্ষিত হউক, তাদের মধ্যে জ্ঞানবিজ্ঞানের চরম বিকাশ ঘটুক এজন্য ভাবতেন এবং তিনি এ চেতনা জাতির মধ্যে ছড়িয়ে দেন। তিনি বলেছেন, "বর্তমান জামানাতে কোনো প্রকার ইলম হাসিল এটা করতে হবে আমাদের সবচেয়ে জরুরী মাসলা। 

৬. সংগঠনের মাধ্যমে: তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, আমাদের বাংলার মুসলমানদের এগিয়ে নিতে হলে এদেরকে জ্ঞানবিজ্ঞানের দিকে আকৃষ্ট করতে হবে। তিনি মুসলমানদের উন্নতির জন্য ভানো, বিপ্লবী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মুসলমানদের কুসংস্কার ও খ্রিস্টান ত্যাদি মিশনারিদের হাত থেকে উদ্ধার করার জন্য তিনি 'আঞ্জুমানে এক ওয়ায়েজিন' নামক একটি ইসলাম প্রচার সংস্থা গঠন করেন। এক সংগঠনের বহু অবৈতনিক ও তেরোজন বেতনভোগী ইসলাম সুলে প্রচারক নিযুক্ত করা হয়। তারা সভা, সমিতির আয়োজন করে এবং জনগণকে শিরক, বিদআত ও কুসংস্কারের হাত থেকে বাঁচার দের জন্য জোরালো আহ্বান জানাতেন। তাঁর বলিষ্ঠ উদ্যোগ ও তাই পৃষ্ঠপোষকতায় বহু মক্তব, মাদ্রাসা, দাতব্য চিকিৎসালয় ও মসজিদ গড়ে উঠে। তাঁর আহ্বানে সাড়া দেন বাংলার আলেম স্কার সমাজও। ফলে তাঁকে সভাপতি করে গঠিত হয় 'জমিয়তে বাংলা ওলামা বাঙলা আসাম'। এ জমিয়তের সেক্রেটারী হন মওলানা নি। মোহাম্মদ আকরাম খাঁ, জয়েন্ট সেক্রেটারি মওলানা মনিরুজ্জামান এক, ইসলামাবাদী ও সহকারী সেক্রেটারি ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। য়ত উক্ত সংগঠনের মাধ্যমে বাংলায় ব্যাপক সংস্কার করা হয়।

 ৭. জ্ঞানবিজ্ঞানে উদ্বুদ্ধকরণ: তিনি শুধু ইসলাম প্রচার ও চার সংস্কারই করেননি। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মুসলমানরা যেন অবদান রাখতে পারে এবং বৈষয়িক জগতে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে প্রায় পারে সেদিকেও দৃষ্টি রাখেন। এ উদ্দেশ্য তিনি বলেছেন, লা "আমাদেরকে চার দলে বিভক্ত হতে হবে। একদল জামানার শাহী ভার দপ্তরে কাজ করবেন। দ্বিতীয় দল কৃষি শিল্পে, তৃতীয় দল ইঞ্জিনিয়ারিং ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে এবং চতুর্থ দল কুরআন শরিফের হুকুম মত বীর ওয়াজ নসিহত, দরস, তদবির বা স্কুল মাদ্রাসার শিক্ষকতার কাজে ন্ত এবং এশায়াতে ইসলাম ও দ্বীনি আদবের চর্চায় নিযুক্ত থাকবেন।" (সূত্র-মাসিক শরিয়ত ইসলাম, ৮ম সংখ্যা, ১১শ সংখ্যা ১৯৪০)

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, মওলানা আবু বকর প্র, সিদ্দিকী (রহ.) সত্যিকার অর্থে মুজাদ্দিদ-ই-জামান অর্থাৎ যুগ ক্ত সংস্কারক ছিলেন। তিনি পথভ্রষ্ট মুসলমানদের সত্যিকার পথের দিশা দিয়ে হেদায়েতের অঙ্গনে এক বৈপ্লবিক ধারার প্রবর্তন করেন। তিনি সত্যিকার হক্কানী পীর ছিলেন। আর সে কারণে শ কোটি কোটি মানুষ আজও তাঁর স্মৃতি স্মরণ করে। তিনি যে ■ শক্তিশালী ও সক্রিয় পরিমণ্ডল সৃষ্টি করে গেছেন তা আজও সমান - গতিতে শিরক ও বিদআতের বিরুদ্ধে জিহাদ করে চলেছে। ■ আজও ইসলামের সঠিক মূল্যবোধের উজ্জ্বল ভাস্কর তাঁর সিলসিলা মুজাদ্দিয়াতের নিশান সমুন্নত রেখেছেন।

Related questions

...