83 views
in সুফিবাদ by (109 points)
ইমাম আল গাযালি (রহ.) জ্ঞানতত্ত্বে দার্শনিক পদ্ধতি সম্পর্কে যা জান লিখ?

1 Answer

0 votes
by (494 points)

ভূমিকা: ইমাম আল গাযালি (রহ.) মুসলিম দর্শনে এক কিংবদন্তির নাম। ইসলামি জ্ঞান ভান্ডারের এমন কোনো দিক নেই যেখানে আল গাযালির পদচারণায় মুখরিত হয়নি। বা তিনি ধর্মবিষয়ক নিষ্প্রাণ যুক্তিসর্বস্বতা থেকে কুরআন হাদিসের কার্যকরি, প্রাণবন্ত ও বাস্তবভিত্তিক অনুশীলনের দিকে মুসলিম জাতিকে ফিরিয়ে আনেন এবং এর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন।

ইমাম আল গাযালি (রহ.) এর জ্ঞানতত্ত্বঃ নিম্নে ইমাম আল গাযালি (রহ.) এর জ্ঞানতত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. জ্ঞানের উৎসসমূহ পর্যালোচনা: জ্ঞান সম্পর্কিত আলোচনার প্রধান বিষয় হলো জ্ঞানের যেসব স্বীকৃত উৎস রয়েছে তার পর্যালোচনা করা। ইমাম আল গাযালি (রহ.) কঠোর সাধনার মাধ্যমে জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় নিজের দখল স্থাপন করেন। আল গাযালি (রহ.) স্বয়ং বিশ্বাস করতেন যে, আদি নীতি (First principle) সর্বশক্তিমান ও ইচ্ছাময়কর্তা, তিনি যা ইচ্ছা তাই করেন, তিনি যেমন ইচ্ছা তেমন আদেশ করেন, তিনি যখন ইচ্ছা করেন এবং যেভাবে ইচ্ছা করেন তখনও সেইভাবে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য জিনিস তৈরি করেন। এইরূপ বিশ্বাসের অসম্ভাবতা স্বতঃসিদ্ধ সত্য কিংবা অনুমান লব্ধ জ্ঞানের ব্যাপার নয়।

২. জ্ঞানের বিভিন্ন উৎসের প্রতি সন্দেহ: ইমাম আল গাযালি (রহ.) জ্ঞানের যে বিভিন্ন শাখা রয়েছে তা আত্মস্থ করার পর দেখলেন যে, ধর্মতত্ত্ব, দর্শন ও বিজ্ঞান প্রতিটি শাখায় ত্রুটিপূর্ণ ও সন্দেহ রয়েছে। আল গাযালির মতে, আক্ষরিক ও প্রত্যক্ষ আত্মজ্ঞান অসম্ভব। আল গাযালি মনে করেন, ইন্দ্রিয় ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে জাগতিক জ্ঞান লাভ করা যায়, কিন্তু পরম তত্ত্বের জ্ঞান লাভ করা যায় না।

৩. পরম সত্যকে জানার পদ্ধতিগত সংশয়: ইমাম আল গাযালি (রহ.) প্রাধিকারদের প্রতি অন্ধ আনুগত্যের ফলে ধর্মতত্ত্ব, ষে দর্শন ও বিজ্ঞানের অযথার্থতা প্রমাণিত করেন। কিন্তু জ্ঞান চর্চা যে হবে স্বাধীন এবং প্রাধিকার মুক্ত। কেননা এক্ষেত্রে প্রদান উদ্দেশ্য চার হলো- সুনিশ্চিত সত্যকে আবিষ্কার করা।

৪. জ্ঞানের উৎসসমূহ সম্পর্কে সংশয়: সংশয়বাদীর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করা। ইমাম আল গাযালি (রহ.) বলেন, জ্ঞানের উৎস হলো দুটি। যথা-  ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষণ ও বিচারবুদ্ধি। প্রথমটি শর্তসাপেক্ষে আর দ্বিতীয়টি কখনো জ্ঞানের যথার্থ উৎস হতে পারে না।

৫. প্রত্যাদেশ ও স্বজ্ঞা: জ্ঞানের উৎস হিসেবে প্রত্যাদেশ ও ত্ত্ব স্বজ্ঞা প্রমাণিত। স্বজ্ঞা হলো যার মাধ্যমে মানবমন কোনো মাধ্যম ছাড়াই কিছুকে জানতে পারে। ইমাম আল গাযালি (রহ.) মনে > করেন স্বজ্ঞার চেয়ে সুনিশ্চিত উৎস হলো প্রত্যাদেশ। তার মতে এক আল্লাহ সর্বব্যাপী জ্ঞানের অধিকারী এ বিষয়ে আল গাযালি কঠোর ও আপসহীন মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তিনি শরিয়ত ও মারেফাতের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে ইসলামের যথার্থ জীবনধারা কী তা নির্ণয় ন করেন। তাঁর মতে, ইন্দ্রিয়ানুভূতি ও প্রজ্ঞা ছাড়াও মানুষের আরেকটি । শক্তি আছে। তিনি হৃদয়ের এ শক্তির নাম দিয়েছেন স্বজ্ঞা। তিনি ধারণা করেন যে, স্বজ্ঞার মাধ্যমে সত্তা লাভ করা সম্ভব।

৬. স্বজ্ঞা জ্ঞানের যথার্থ উৎস হওয়ার কারণ: ইমাম আল গাযালি (রহ.) বলেন, জ্ঞানের যথার্থ উৎস হলো স্বজ্ঞা। কারণ হলো-(ক) জাগতিক সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত, (খ) স্বজ্ঞার জ্ঞান সরাসরি পাওয়া যায়, (গ) স্বজ্ঞার ক্ষেত্রে জ্ঞান এবং জ্ঞেয় একাত্ম হয়ে থাকে ও (ঘ) স্বজ্ঞা সংশয়মুক্ত জ্ঞান দিতে সক্ষম।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, আল গাযালির আবির্ভাবকালে মুসলিম চিন্তাবিদরা ইসলামের সামগ্রিক জীবনবোধ বিস্মৃত হয়ে জ্ঞানের বিশেষ উৎসের ওপর অত্যধিক গুরুত্বারোপ করেন। ফলে তাদের চিন্তাধারায় ইসলামের সামগ্রিক রূপ বিধৃত না হয়ে বিচ্ছিন্ন রূপই ফুটে উঠে। ফলে একমাত্র তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় মুসলিম দর্শনের চিরায়ত রূপ ফুটে ওঠে।

Related questions

...