27 views
in সুফিবাদ by (157 points)
মওলানা কারামত আলী জৈনপুরী (রহ.)-এর নোয়াখালী ও চট্রগ্রামে ইসলাম প্রচার ও সংস্কার সম্পর্কে আলোকপাত কর?

1 Answer

0 votes
by (157 points)

মওলানা কারামত আলী জৈনপুরী (রহ.)-এর ইসলাম প্রচার: 

১. নোয়াখালীতে ইসলাম প্রচার ও সংস্কার: শিরক- বিদ'আদ ও অনৈসলামিক ক্রিয়াকর্মের অক্টোপাশ থেকে বরিশালের মুসলমানদেরকে মুক্ত করে মওলানা জৈনপুরী (রহ.) নোয়াখালিতে এসে পৌঁছান। এখানকার জনগণ তাঁকে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করেন। তাঁর পির ভাই মওলানা ইমামুদ্দীন (রহ.) পূর্ব থেকেই নোয়াখালিতে ছিলেন। মওলানা জৈনপুরীকে পেয়ে তিনি খুব খুশি হন। মওলানা ইমামুদ্দিনের সহযোগিতায় অল্প দিনের মধ্যেই সমগ্র নোয়াখালী ইসলামের আমল-আখলাক ও রীতিনীতিতে আবাদ হয়ে যান। এখানকার জনগণের আদব-কায়দা ও আতিথেয়তায় তিনি অত্যন্ত মুগ্ধ হন এবং প্রাণভরে আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন। বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার সর্বত্র যে পরহিজগারী, দ্বীনদারী, মসজিদ, মাদ্রাসা ও উলামায়ে দ্বীনের প্রাচুর্যতা দেখা যাচ্ছে তা হযরত মওলানা কারামত আলী জৈনপুরী (রহ.) ও মওলানা ইমামুদ্দীন (রহ.)-এর প্রচার, সংস্কার, আবাদ ও দুআরই ফল। তাঁদের দু'আর বরকতেই এই জেলার আলেমরা আমল-আখলাক শুদ্ধ করে পূর্ব বাংলার প্রতিটি জেলায়, গ্রামে এবং ঘরে ঘরে যেয়ে অজ্ঞ জনসাধারণ ও ছেলেমেয়েদেরকে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত, আল্লাহ-রাসুলের নাম, কালিমা ও নামায রোজা শিখাতে সক্ষম হয়েছেন এবং আজও যে তা চলছে এটা সর্বজনস্বীকৃত। মাওলানা জৈনপুরী (রহ.) নোয়াখালীর মাওলানা ইমামুদ্দীন (রহ.)-এর নিকট কাশফ ও মুশাহাদা সম্পর্কীয় সিরাতুল মুস্তাকীম গ্রন্থখানি পড়ে নেবার জন্য তাঁর পির কেবলা সাইয়্যিদ আহমদ শহিদ (রহ.) কর্তৃক স্বপ্নযোগে আদিষ্ট হন। তদানুসারে কুমিল্লার শুজা বাদশার মসজিদে ১৭ দিনে তিনি তা দু'দফায় পাঠ করেন। নোয়াখালীর সন্দ্বীপে জৈনপুরী (রহ.)-এর সুযোগ্য পুত্র মাওলানা আবুদল আউয়াল ১২৮৬ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পিতার ন্যায় ইসলাম প্রচার এবং হিদায়েতের কাজে জীবনীপাত এ করেন। তিনি ১২ শাওয়াল ১৩৩৯ হিজরি ইন্তিকাল করেন। ব কলকাতার মানিকতলার গোরস্থানে তাঁর মাজার আছে। তিনি ক মানুষকে হিদায়েতের জন্য ১২০ খানা গ্রন্থ রচনা করেন।

২. চট্টগ্রামে ইসলাম প্রচার ও সংস্কার: নোয়াখালী থেকে মাওলানা সাহেব চট্টগ্রামে গিয়ে পৌঁছেন। এখানে এসে তিনি জানতে পারেন, এখানকার এক প্রতাপশালী জমিদার অনেক আলিমকে হত্যা করেছে। মাওলানা সাহেব তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে লোকে তাঁকে বারণ করেন। কিন্তু সকল বাধা অতিক্রম করে তিনি জমিদার বাড়িতে যেয়ে হাজির হন। দাম্ভিক জমিদার নাকি কাউকে বসতে দিতো না। কিন্তু মওলানাকে দেখার সাথে সাথে চেয়ার এগিয়ে দেন - এবং তৌহিদ সম্পর্কে আলোচনা করেন। হযরত জৈনপুরী (রহ.) তাকে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে যুক্তি দ্বারা বিষয়টি সুন্দরভাবে প্রমাণসহ বুঝিয়ে দেন। তখন জমিদার বললো, আমি যদি আপনার যুক্তি ও প্রমাণ না বুঝি তখন আপনি কি করবেন? মওলানা বললেন, - আবার বুঝাবো। জমিদার বলল, তবুও যদি না বুঝি? তিনি বললেন, আবার বুঝাবো। তৃতীয়বার একই প্রশ্ন করার সাথে সাথে মাওলনা সাহেব কোষ থেকে তরবারি বের করে বললেন তবে এর দ্বারা বুঝাব। মওলানার ইমানী বিক্রম, সৎসাহস ও আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস দেখে জমিদার মুগ্ধ হন। মওলানার নিকট নিজেকে সমর্পণ করেন। ইতঃপূর্বে কৃত অপরাধের জন্য তিনি আল্লাহর নিকট নিকট ক্ষমা প্রথনা করেন এবং হযরত মওলানা জৈনপুরী (রহ.)-এর নিকট বায়আত গ্রহণ করেন। ইসলামের সেবায় নিজের অর্থ, বৈভব ও ক্ষমতা উৎসর্গ করেন। চট্টগ্রামে তখন মৌলবি মুখলেছুর রহমান নামে এক বিদআতী পির পিরালী ব্যবসায়ে জেঁকে বসেছিল। বহু দীনদার মুসলমানকে বেশরা ক্রিয়াকর্মে উদ্বুদ্ধ করে বেইমান করে তুলছিল। অনৈসলামিক ক্রিয়াকর্মে চট্টগ্রামের আকশ-বাতাস কলুষিত করে তুলছিল। মওলানার সময়োপযোগী হস্তক্ষেপ এবং ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা ও প্রচারণার ফলে ভণ্ড মোখলেছুর রহমানের প্রদর্শিত ভ্রান্ত পথ ছেড়ে জনতা মওলানার মুরিদ হতে থাকে। এতে মোখলেছুর রহমান প্রমাদ গুণলো এবং ভাবলো সমস্ত মুরিদান চলে গেলে তার উপায় কি হবে? মওলানকে জব্দ করার জন্য তাড়াতাড়ি করে তিনি ফারসি ভাষায় সাতটি প্রশ্ন লিখে মওলানার নিকট প্রেরণ করেন। প্রশ্নগুলো ছিল জৈনপুরীর পিরে কেবলা সাইয়্যিদ আহমদ শহিদ বেরেলবী, মওলানা ইসলামই শহিদ ও মওলানা আবদুল হাই দেহলবী সম্পর্কিত, যাদেরকে সে কাফির পর্যন্ত বলতে দ্বিধাবোধ করেননি। জৈনপুরী (রহ.) প্রমাণসহ প্রশ্নগুলোর দাঁতভাঙ্গা জবাব লিখে পাঠান। মুখলেছুর রহমান এতে দমলো না, বরং মওলানাকে হানাফী মাযহাব থেকে খারিজ বলে অপবাদ দিল এবং সিরাতুল মুস্তাকীম, কুউয়াতুল ইমান, মাসায়েলে আরবাইন প্রভৃতি গ্রন্থগুলো আমল করাকে কুফর বলে প্রচারণা চালাল। এরপরও সে নানাভাবে প্রতারণা করার চেষ্টা করল। কিন্তু চূড়ান্তভাবে তার ভণ্ডামি সকলের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল। লোকেরা তাকে চূড়ান্তভাবে পরিত্যাগ করে মওলানা জৈনপুরী (রহ.)-এর নিকট বায়আত হলেন। 

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, কারামত আলী জৈনপুরী (রহ.) শরিয়তের পরিপন্থি কাজসমূহ প্রতিরোধ প্রতিবাদ ও প্রতিকারের কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কিন্তু তিনি কখনোই সত্য প্রকাশে, ইসলাম প্রচারে ও কুসংস্কার দূরীভূত করার কাজে এতোটুকুও হতদ্যোম হননি, বরং বিরামহীন পথচলায় তিনি ছিলেন সদা অবিচল নির্ভীক পথিক।

Related questions

...